1) বন্ধুত্ব
"আপ হাসনাবাদ লোকাল, শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ যাওয়ার গাড়ি ৫নম্বর প্লাটফর্ম এ আসছে " উপরের লাইন টি তিনবার করে মাইক এ বললো। একবার বাংলা,হিন্দি ও ইংলিশ এ। মাইক এ ঘোষনা টা শুনে রাই প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে ওভার ব্রিজে উঠে হাটতে শুরু করলো। প্লাটফর্ম এ নেমে দেখে ট্রেন এখনো আসে নি। মোবাইল স্ক্রিন এর দিকে নজর যেতেই দেখে রাত পৌনে ১০ টা বেজে গেছে। সময় দেখেই ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখা দিল। মনে মনে হিসাব করছে রাই যে প্লাটফরমে নামতে নামতে প্রায় ১১৹৩০টা বেজে যাবে। সাইকেল স্ট্যান্ড এর দোকান ও বন্ধ হয়ে যাবে আজ। ট্রেন এল, আজ ট্রেন লেট এ চলছে তাই ভির ছিল, সে ভির কে উপেক্ষা না করেই রাই টেনশন নিয়ে ট্রেনে চেপে উঠলো। কোন ক্রমে একটু জায়গা বার করে দড়ালো সে।একটা শান্তি যে সে বাড়িতে ফোন করে বলে দিয়েছে, আজ তার ফিরতে দেরি হবে। এবার রাই এর পরিচয় দেওয়া যাক, রাই এই বছরই কলেজ পাস করা ময়ে,গরিব ঘরের এক মাত্র মেয়ে সে, অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করেছে, শিক্ষিত হয়েছে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে। কিম্তু আজকাল কার বাজারে চাকরি পাওয়া তো ডুমুড়ের ফুলের মতোন। তাও অনেক বলে কয়ে একটা পার্ট টাইম জব এর ববস্তা করেছে। এক এই বর্ষা কাল তার উপর কি যেন একটা নিন্ম চাপ এসেছে তাই দুপুর দিয়েই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বর্ষা কাল বলেই রাই এর কাছে ছাতা ছিল, কিম্তু বিকেল দিয়ে এতো ভারি বৃষ্টি পড়ছে যে ওর অফিস দিয়ে বেরোতে লেট হয়ে গেল, তার পর মেট্রো তেও সেরম ভির ছিল। কোন ক্রমে সে এই ট্রেন টা ধরেছে। ------------------ রাই ও সীমা প্রতিদিন একসাথে বাড়ি ফেরে। আসলে স্টেশন এ নেমে তার পর প্রায় ১৫মিনিট পথ সাইকেল চল্লালে আগে রাই এর বাড়ি, তার ৫মিনিট পর সীমা'র বাড়ি আসে। তাই ওরা এক সাথেই বাড়ি ফেরে। সীমা, হলো রাই এর ছোট বেলার বন্ধু। স্কুল ও কলেজ এক হওয়া বলাই যায় সীমা ই রাই এর বেস্ট ফ্রেন্ড। সীমা ও বারাসতে একটা পার্ট টাইম চাকরি করে। কিন্তু আজ সীমা ওর মামাবাড়ি যাবে তাই, সে সকাল এই রাই কে ফোন করে জানিয়ে দিয়াছে যে সে আজ বাড়ি ফিরবে না। ট্রেনে এ একটা সিট পেল সেটাও চার নম্বরে, একটু জায়গা পেয়ে রাই বসল। একটু স্বস্তি পেল কিম্তু কপাল এর চিন্তার রেখা টা এখনো যাইনি তার মনে এখন একটাই চিন্তা যে অতটা পথ সে একা ফিরবে কি করে। বৃষ্টির কমার কোন লক্ষণই দেখা যায় না,উল্টে যতো সময় যাচ্ছে বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ছে। যখন সে হাসনাবাদ স্টেশনে নামল তখন ১১৹১৫ বাজে । একেই গ্রম্মো এলাকা যেখানে এক ফোটা বৃষ্টি পড়ুক আর না পড়ুক কারেন্ট চলে যায়, সে খানে বিকেল দিয়ে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে আজ তো কারেন্ট এর আর দেখাই মিলবে না। রাই দেখল পুরো স্টেশন ফাকা ও অন্ধকার , শুধু একটা মাত্র জনেরটর এর আলো টিকেট ঘর এর কাছে জল্ছে। তাছাড়া পুরো অন্ধকার , দশ হাত দূরে কেউ দাড়িয়ে থাকলেও রাই বুঝতে পারবে না। সাইকেল এর দোকান ও বন্ধ হয়ে গাছে, রাই একবার ভাবল বাবা কে কি ফোন করে ডকে নেবে। এরম ভাবে ও ব্যাগ দিয়ে ফোন টা বার করে দেখে নেটওয়ার্ক নেই, অগত্তা তাকে একাই যেতে হবে। সে মনে মনে ভাবল ভালই হয়েছে, বাবার শরীর টাও তো ভালো নেই, এই ঝড় বৃষ্টি টে আর কস্ট করে আসতে হবে না। সে অন্ধকার এর দিকে তাকিয়ে মনে জোর এনে হাটা শুরু করলো। ফোন এ টর্চ এর আলো জ্বেলে সে রওনা দিল। আজ তার সীমা'র কথা খুব মনে পরছে, সীমা থাকলে ওরা কি সুন্দর গল্প করতে করতে চলে যেত কোন অসুবিধাই হতো না। এমন সময় রাই দুরে কাউ কে দেখাতে পেয়ে থমকে দড়ালো,বৃষ্টির মধ্যে আর ওর ফোন এর অল্প আলো দিয়ে দেখে মনে হলো কেউ যেন দাড়িয়ে আছে। পরনে সাদা চুরিদার , যেন কোন ময়ে এর ছায়া মূর্তি , রাই এর দেখেই গা টা ছম ছম করে উঠল। তাও সে সাহস করে মেয়ে টির দিকে এগোল। কাছে গিয়ে দেখে এতো সীমা, সীমা কে দেখেই, রাই এর মনে জোর এল র এক নিমিসে সব ভয় দুরে চলে গেল। "কি রে সীমা! তুই এখানে, এই ভাবে দাড়িয়ে?" সীমা বল্ল -"তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম রে, রাই" "আর দেখ না ছাতা টাও আনতে ভুলে গেছি রে, তাই ভিজে গেছি " রাই বল্ল- -" তোর না আজ মামাবাড়ি যাওয়ার কথা যাস নি? আচ্ছা ছাড় আগে আমর ছাতার তলায় আয় " সীমা বল্ল- -" না রে যা বৃষ্টি এল আর যাওয়া হয় নি, নারে থাক আমি তো বৃষ্টি টে ভিজেই আছি আমর আর ছাতা লাগবে না। তুই এগিয়ে এগিয়ে চল আমি টর্চ এর আলো দেখে আসছি।" তার পর আর বিশেষ কোন কথা হয় না দুজনই বাড়ি র পথে রওনা দেয়। রাই মনে মনে ভাবে আজ যেন সীমা কে অন্য রকম লাগছে, সীমা তো এতো চুপ চাপ না। -এই কথাটা যেন সীমা বুজতে পরেছে,তার কথার উত্তর এ সীমা বলে উঠলো - " আরে আসলে আজ খুব tired, আর ভালো লাগছে না" এরপর আর বিশেষ কোন কথা হয় নি ওদের,রাই এর বাড়ি চলে আসে,রাই বলে- -"সীমা চললাম,টাটা।" সীমা বল্ল- -"ও কে, বাই,ভাল থাকিস।" বলে সীমা এগিয়ে গেল। রাই দরজা এ ধাক্কা দিতে গিয়ে খটকা লাগল,সীমা র আজ কি হলো হতাৎ ভাল থাকিস বল্ল কেন, পিছোনে ফিরে দেখল সুদূ অন্ধকার, কেউ কথাও নেই। মনের সব দিধা দুর করে রাই ঘরে ধুকলো। ঘরে ঢুকে রাই দেখে হেরিকেণ এর আলো জ্বালিয়ে বসে আছে। রাই বল্ল- -"বাবা, প্রায় ১২টা বাজতে চোল্ল তোমর না শরীর খারাপ তুমিও এখনো জেগে বসে আছ, ঘুমাও নি?" রাই এর মা ধরা গলায় উত্তর দিল- -"বাবু তুই সাবধানে বাড়ি এসেছিস তো?" রাই এর মা এর গলার আওয়াজ শুনে রাই বল্ল মা তোমাদের কি হয়েছে কদ্চো কেন। মা বল্ল- -" বাবু সীমা---" সীমা কি মা বলো--- -"সীমা আর নেই বাবু।। " বলেই মা হাউ হাউ করে কাদে ফেলল। সীমা 'র মা বল্ল যে মামাবাড়ি যাওয়ার পথে একটা গাড়ি আসে আচমকা সীমা কে মেরে দিয়ে চলে গাছে। একে বার এ স্পট ডেড। রাই এই সব শুনে কিছুই বুজতে পারছিল না। ওর মনে তখন হাজার একটা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে ,তালে ও এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিল ,কে ওর সাথে এল , ভাল থাকিস কে বল্ল , এ সব ভাবতে ভাবতে রাই মাথা ঘুরে পরে গেল মেঝে তে। বাইরে বৃষ্টি র তেজ টা যেন আর ও কিছু তা বেড়ে গেল।।।।।।।
2)মাটির দূর্গা পুজো
রায় বাড়িতে আজ মা আসবে। চার দিন ঘর আলো করে মা থেকে, দশমী'র দিন সবাই কে কাঁদিয়ে চলে যাবে। আবার সামনের বছরের অপেক্ষায় বসে থাকবে সবাই।
তাই রায় বাড়িতে আজ অনন্দের শেষ নেই। পুরো বাড়ি নতুন রূপে সেজে উঠেছে। রায় বাড়ির গিন্নি কমলা দেবী প্রতি বছর নিজের হাতে পূজার জোগার করে, এই বছর ও তার ব্যেতিক্রম হয় নি।
কিন্তু রায় বাড়ির অন্দর দিয়ে মৃদু কান্নার শব্দ আসছে, আর কমলা দেবী খালি মূখ বেঁকাছে। অন্দরের এক ছোট্ট ঘরে কমলা দেবী'র বড়ো বৌমা রাই কেঁদে যাছে। কারন আজ তার ভ্রূণ হত্যা হয়েছে, রায় বাড়ির প্রথম সন্তাণ নাকি মেয়ে হতে পারে না তাই কমলা দেবী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মা দুগ্গা কে নিয়ে যেই মন্ডপ এ এনেছে অমনি সব আলো নিভে গেল, তাড়াহুড়ো তে মা এর একটা হাত ও মুকুট ভেঙে গেলো। সবাই বলে উঠল এতো ভারী অমঙ্গোলের চিহ্ন মা ঢুকতে না ঢুকতেই অন্ধকার। তাও সব ভুলে আবার আলো জ্বালানো তোর জোর শুরু হলো। ভিতর ঘরে রাই এর কানে ও কথা তা গেল রাই মনে মনে বলে উঠল--
" গর্ভে দূর্গা কে হত্যা করে, মাটির দূর্গা কে পুজো করো।।
এতো পাপ ধর্মে সইবে তো।।"